মালয়েশিয়ায় সড়ক নিরাপত্তা প্রযুক্তিতে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা

মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত জাতীয় পর্যায়ের সড়ক নিরাপত্তা প্রযুক্তি উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা ‘শেল সেলামাত সামপাই ভার্সিটি চ্যালেঞ্জ ২০২৫’-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দল ‘টিম সফট শেল ক্র্যাব’।
এ দলের চার সদস্য হলেন- সামিন সারওয়াত, তানহিম বিন জসিম, হুজাইফা সাওমান ও তানভীর আহমাদ। তারা সবাই ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়ায় (ইউটিএম) পড়াশোনা করছেন।
বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর ) রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন মালয়েশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী লক সিউ ফুক। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পুরস্কার হিসেবে দলটি পেয়েছে ১০ হাজার রিঙ্গিত (প্রায় তিন লাখ টাকা)।
বিজয়ী দলটি তৈরি করেছে ‘কার বাডি’ নামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত মোবাইল অ্যাপ। এ অ্যাপটি স্মার্টফোন বা গাড়ির ক্যামেরার মাধ্যমে চালকের চোখ ও মুখভঙ্গি বিশ্লেষণ করে মাইক্রো-স্লিপ শনাক্ত করতে পারে। অতিরিক্ত ক্লান্তিজনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এটি চালককে আগাম সতর্কবার্তা দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তিটি চালু হলে বছরে অন্তত ৫০০ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে এবং প্রায় ৪.১ বিলিয়ন রিঙ্গিত (প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা) অর্থনৈতিক ক্ষতি সাশ্রয় করা যাবে।
এবারের ‘শেল সেলামাত সামপাই ভার্সিটি চ্যালেঞ্জ ২০২৫’ প্রতিযোগিতার ফাইনালে অংশ নেয় পাঁচটি দল। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দলটির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল- ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া সাবাহ (ইউএমএস), ইউসিআইএসআই কলেজ, ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া (ইউপিএম) ও এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন (এপিইউ)।
বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন শেল মালয়েশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তা, মালয়েশিয়া সরকারের সড়ক পরিবহন বিভাগ, মালয়েশিয়ান ইনস্টিটিউট অব রোড সেফটি রিসার্চ (মাইরস), উচ্চশিক্ষা বিভাগ ও প্যান্ডুলাজুর বিশেষজ্ঞরা।
শেল মালয়েশিয়ার কান্ট্রি চেয়ার ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (আপস্ট্রিম) সিতি সুলাইমান বলেন, “প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ অসচেতনতা ও বেপরোয়া আচরণের কারণে প্রতিরোধযোগ্য সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন। সমাজের অংশ হিসেবে সবার দায়িত্ব নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা। শেলে আমরা তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে চাই, যাতে তারা সৃজনশীল সমাধান বের করে এবং নিজেদের কমিউনিটিতে নিরাপত্তা প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে।”
চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ‘টিম সফট শেল ক্র্যাব’ দলের সদস্যরা জানান, “এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ আমাদের চিন্তাভাবনার ধরণ বদলে দিয়েছে। উদ্ভাবনী টুল ও কৌশলগত সমস্যা সমাধানের অভিজ্ঞতা আমাদের এমন সমাধান তৈরি করতে সক্ষম করেছে, যা সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে বাস্তব ভূমিকা রাখতে পারে।”
মালয়েশিয়ায় শেলের সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৫৭ সালে। পরে তারা সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সড়ক নিরাপত্তায় নতুন উদ্ভাবন ও কার্যকর সমাধান বাস্তবায়নে কাজ চালিয়ে আসছে।
এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘ভার্সিটি চ্যালেঞ্জ’ চালু হয় ২০১৭ সালে, যার লক্ষ্য তরুণ শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা সমস্যা মোকাবেলায় কার্যকর সমাধান খুঁজতে উদ্বুদ্ধ করা।