স্বদেশে ফিরতে চান কিডনি রোগে আক্রান্ত মালয়েশিয়া প্রবাসী বকুল
বিদেশ মানেই যেন অনেকে মনে করে সোনার হরিণ।এই সোনার হরিণ ধরার জন্য অনেকে বসত বাড়ি, ভিটা মাটি, গরু ছাগল, বিক্রয় করে কেউ বা চড়া সুদে বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে পাড়ি জমান এই স্বপ্নের দেশগুলোতে। প্রবাসে গেলেও অনেকের কপাল ভালো হলে হয়তো মিলে ভাল কোম্পানী। আর কপাল খারাপ হলে পড়তে হয় বিভিন্ন বিড়োম্বনাই। কিন্তু পিছু ছাড়ে না ঋণের চিন্তা ও পারিবারিক দুশ্চিন্তা।প্রবাসে এসে পারিবারিক ও আর্থিক দুশ্চিন্তা এবং অনিয়ম তান্ত্রিক চলাফেরার কারনে অনেকেইবিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
তেমনি বকুল নামের এক প্রবাসী দীর্ঘ দিন যাবৎ মালয়েশিয়া কুয়ালালামপুর হাসপাতালের বেডে অচেতন অবস্থায় কিডনি রোগে আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রয়েছেন।বকুল ২০০৭ সালে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান।প্রাথমিক আবস্থায় কোম্পানী ভালো হলেও স্বল্প বেতনের কারনে বাড়ি থেকে জমি বিক্রয় ও চড়া সুদে ঋন করে আসা টাকা পরিশোধ ও পারিবারিক চাহিদা মেটাতে এক পর্যায়ে ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও দেশে আর ফেরা হয়নি।
পরবর্তিতে মালয়েশিয়া সরকার রি-হিয়ারিং প্রোগ্রাম চালু করলে অনেক অবৈধ প্রবাসীদের মতো বকুলও মাইজির মাধ্যমে বৈধ হবার জন্যে আবেদন করে। কিন্তু অনেকেই ভিসা পাইলেও দুৰ্ভাগ্যর কারনে বকুলের কপালে আর মেলে নাই মালয়েশিয়ায় থাকার বৈধ পারমিট। আর এই অবৈধ থাকার দুঃশ্চিন্তা এবং অনিয়মতান্ত্রিক চলাফেরার কারনে আস্থে আস্থে অসুস্থ হয়ে পড়েন বকুল।
গত ফ্রেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যান বকুল হোসেন, প্রাথমিক ভাবে কিছু চিকিৎসা নিলেও তার কোন উন্নতি হয় না, পরে উপায়ন্ত না দেখে মালয়েশিয়া কুয়ালালামপুর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ভর্তি হলে কর্তব্যরত ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর জানান, তার দুইটা কিডনিই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এভাবে কিছুদিন চিকিৎসা নেবার পর একটু সুস্থ হলেই আবার চলে আসতেন বাসায়। একবার হাসপাতালে ভর্তি হলেই খরচ গুণতে হয় প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার মালয়েশিয়ান রিংগিত যা বাংলাদেশী টাকায় ১ থেকে দেড় লক্ষ টাকা ।
মালয়েশিয়ায় থাকা বকুলের আত্মীয় আসলাম ও লোকমান হোসেন এনটিভি অনলাইনকে জানান, আমার মামা বকুল হোসেনকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৭/৮ বার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়ছে এতে প্রায় খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার রিংগিত যা ১০ হইতে ১২ লক্ষ টাকা। আর এই টাকার যোগান দিতে দেশ থেকে জমিজমা বিক্রয় এবং ধার দেনা করে আনা হয়ছে গত এক সাপ্তাহ হলো মামার কোন জ্ঞান নাই অচেতন অবস্থায় আছে। জানিনা আবার হাসপাতালের বিল কত হয়েছে।
এ বিষয়ে লোকমান ও আসলাম বলেন, আমরা বকুল হোসেনকে দেশে পাঠানোর জন্যে মালায়েশিয়াতে অবস্থিত বাংলাদেশ দুতাবাসে অনেক বার যোগাযোগ করেছি কিন্তু নরমাল ফ্লাইট না থাকার জন্যে তাকে দেশে পাঠানো সম্ভব হয় নাই। তাই মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দুতাবাস ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ করবো যেনো তাকে উন্নত চিকিৎসা এবং স্পেশাল ফ্লাইটের মাধ্যমে খুব দ্রুত দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
এ দিকে বাংলাদেশে থাকা বকুলের মা মুঠো ফোনে এনটিভি অনলাইনকে জানান, আমার ছেলে মালয়েশিয়া হাসপাতালে ভর্তি আছে।আমার ছেলে যাতে দেশে আসতে পারে তার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করছি। কান্না কণ্ঠে বকুলের স্ত্রী জানান, আমার কোনো পুত্র সন্তান নাই তিনটা মেয়ে।পরিবারের একমাত্র উপার্জন ব্যাক্তি আমার স্বামী । সে আজ ৫/৬ মাস অসুস্থ জমি জমা ও ঋন করে তার চিকিতসার জন্য মালয়েশিয়ায় টাকা পাঠাচ্ছি । এখন মেয়েদের মুখে তিন বেলা ভাত তুলে দিতেই আমি হিমসিম খাচ্ছি ।
বকুলের মেয়েরা ও বাবার উন্নত চিকিতসার জন্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ করেন এবং তাকে স্পেশাল ফ্লাইটের মাধ্যমে দেশে প্ররনের জন্যে অনুরোধ করেন।দেশে থাকা তার আত্বীয় ও প্রবাসে থাকা সবাই রেমিটেন্স যোদ্ধা বকুল হসেনের জন্য প্রধানমন্ত্রী, এমপি, জেলা প্রশাসন, সমাজের বিত্তবান, অর্থশালী, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবীদের কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করেন।বকুল পাবনা জেলার আতাইকুলা থানার শ্রীকোল গ্রামের মৃত মোজাম্মেল মোল্লার ছেলে।