প্রকৃত গবেষণার মূল্যায়নই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে

গবেষণা শব্দটি আমাদের কাছে অতি পরিচিত। কিন্তু এর প্রকৃত অর্থ ব্যাপক। আমাদের সমাজে গবেষণা নিয়ে বিদ্যমান দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রচলিত অর্থের সঙ্গে প্রকৃত অর্থের বিস্তর ফারাক রয়েছে। গবেষণাকে আমরা সহজসাধ্য কাজ মনে করি। অবশ্য, এ ধারণা তৈরির পেছনে গবেষকরাই অধিক ভূমিকা রেখেছেন। তাদের কপি টু পেস্ট পলিসির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে গবেষণা নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।
কিন্তু মানসম্মত গবেষণা সমাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজে গবেষকের যেমন দায় রয়েছে, তেমনি একজন ভালো গবেষকের সর্বোচ্চ সম্মান নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু গবেষক যখন কেবল প্রকাশনা নির্ভর গবেষণা পরিচালনা করেন, যখন তার গতানুগতিক কাজে মানবকল্যাণ থাকে না, তখন তিনি রাষ্ট্রের সম্পদ না হয়ে অর্থ অপচয়ের বোঝা হয়ে ওঠেন। ফলশ্রুতিতে গবেষণায় অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র হয়ে পড়ে অনাগ্রহী। এতে অনুসন্ধানি গবেষকরা বিপাকে পড়েন। প্রকৃত গবেষণায় পৃষ্ঠপোষকতা হারান। আর আমরা ইতিবাচক গবেষণার ফল থেকে বঞ্চিত হই।
বাংলাদেশে অনেক ভালো গবেষক আছেন। যাদের কাজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। কিন্তু নিজ দেশে গবেষণার ক্ষেত্রে তারা অর্থসহ নানাবিধ প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন। এতে গবেষণার আগ্রহটাই হারিয়ে ফেলেন অনেকে।
মনে রাখতে হবে, মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আমাদের সম্পদ সীমিত। তাই রাষ্ট্রীয় সম্পদের প্রকৃত ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রত্যেক নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। সুতরাং গবেষণায় যতটুকু বরাদ্দ রয়েছে, তা যেনো শুধু গতানুগতিক প্রকাশনা নির্ভর না হয়। প্রকৃত মানবকল্যাণমূলক গবেষণা আমাদের জন্য খুবই জরুরি।
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, ‘যে জাতি গুণীর কদর করতে জানে না, সে জাতি কখনো উন্নত জাতি হতে পারে না।’- এদিক থেকে আমরা অনেকটাই দুর্ভাগা। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লাঠি অথবা কলম দিয়ে মারার সক্ষমতা না থাকলে আমরা তাকে গুণী হিসেবে সম্মান দিতে অভ্যস্ত নই। কিন্তু এমন নেতিবাচক গুণ গবেষকের থাকে না। থাকার দরকারও নেই। অনুসন্ধানি কাজই তার আসল গুণ। তাই, হতাশ হলে চলবে না।
প্রকৃত গবেষণাই তাকে সম্মান নিয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। একখানে না পেলে, অন্য কোথাও সমাদৃত হবে। দেশে না পেলে বিদেশে কোনো এক সময় প্রকৃত গবেষকের মূল্যায়ন হবেই হবে। উন্নত বিশ্বে গবেষণাকেই উন্নয়নের চাবিকাঠি বিবেচনা করা হয়। তাই গবেষকরাও আকাশচুম্বী সম্মান পান।
যেমন মালয়েশিয়ার কথাই ধরা যাক, শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্বারোপ করেই আজ তারা বিশ্বে রোল মডেল। লাখ লাখ টাকা খরচ করে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সে দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। অনেকে পেয়েও যাচ্ছেন কাংখিত স্বীকৃতি। শিক্ষক ও গবেষক হিসেবে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গড়ছেন উজ্জ্বল ভবিষ্যত। গবেষণার গুরুত্ব বুঝে কদর করতে পারা এমন দেশ কিন্তু অনেক। সুতরাং হতাশ হলে চলবে না। গবেষণাই একজন গবেষকের আসল কর্মক্ষেত্র। তাই তাকে গবেষণাতেই মনোনিবেশ করতে হবে। মানবকল্যাণের পথ উন্মোচন করতে হবে। নিজের কাজই হয়ে উঠবে তার আসল স্বীকৃতি। আসবে দেশের প্রকৃত মুক্তি, প্রকৃত সমৃদ্ধি।
লেখক : কৃষিবিদ হাচিব মোহাম্মদ তুষার
পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি পুত্রা, মালয়েশিয়া