পড়াশোনা শেষে মালয়েশিয়ায় চাকরি পাবেন কিভাবে?

এশিয়ার ইউরোপ খ্যাত দেশ মালয়েশিয়া গত দুই দশক ধরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় আগ্রহের শীর্ষে থাকা দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। প্রথম স্থানে রয়েছে আমেরিকা।উন্নত শিক্ষা, শিক্ষাব্যায় এবং জীবনযাত্রার খরচ সাধ্যের মধ্যে থাকায় দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে এ দেশটিতে।
পড়াশোনার পাশাপাশি শর্তসাপেক্ষে পার্টটাইম কাজের সুযোগ থাকলেও পড়াশোনা শেষে কিভাবে দীর্ঘমেয়াদী জব পাওয়া যায় সে বিষয়ে জানার আগ্রহ সবারই।
এ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা ও পরিকল্পনার অভাবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারছেন না অধিকাংশ শিক্ষার্থী। মূলত বিদেশে উচ্চশিক্ষার পর এই আধুনিক ও উন্নত শিক্ষায় অর্জিত জ্ঞান দেশের মানুষের কল্যাণে ব্যায় করাটাই হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের প্রধান লক্ষ্য। তবে এটাও সত্য যে বিদেশে চাকরির ভালো কোন সুযোগ থাকলে সেটি গ্রহণের মধ্যদিয়েও দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে অবদান রাখা সম্ভব।
মালয়েশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদী থাকার পরিকল্পনা থাকলে আপনার শিক্ষাজজীবন থেকেই নিতে হবে বেশ কিছু পদক্ষেপ। আজ আমরা সে বিষয়েই বিস্তারিত বলার চেষ্টা করবো।

একজন শিক্ষার্থী বা চাকুরীজীবী কেউ-ই মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পায় না। তবে বৈবাহিক সূত্রে বিভিন্ন আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি সময় পর স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ এখনো রয়েছে দেশটিতে। আর এই সুযোগ এখন অন্যান্য পেশার মানুষদের চেয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অনেকটাই অনুকূলে।
তবে এর বাইরে চাকরি ম্যানেজ করেও দুই থেকে দশ বছর বা তারও বেশি সময় থাকা যাবে মালয়েশিয়ায় এবং এটিই শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় থাকার।
পৃথিবীর উন্নত সব দেশেই অফিসিয়াল চাকরি পাওয়াটা সম্পূর্ণই নির্ভর করে যোগ্যতার উপর। এটি একাডেমিক ভালো রেজাল্টই শুধু নয় বরং এক্ট্রাকারিকুল্যার এক্টিভিটিসের উপরও সমানভাবে নির্ভর করে।
মালয়েশিয়ায় একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরিতে যোগদান করার আগে থেকেই তাকে ভালো রেজাল্টের পাশাপাশি নেটওয়ার্কিং, কমিউনিক্যাশন এবং লিডারশিপ স্কিলের এর মত সফট স্কিলগুলো ভালোকরে রপ্ত করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষাজীবনে যারা স্নাতক পর্যায়ে আসবে তারা দ্বিতীয় বর্ষ থেকেই বিভিন্ন কোম্পানিতে একাডেমিক সাবজেক্ট রিলেটেড ফিল্ডের জব সার্কুলারগুলো ঘাটতে থাকতে হবে। স্নাতোকত্তরে আসা শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই করতে পারে।
স্নাতকের শেষ বর্ষে ইর্টার্নশিপ শুরুর আগে আগে ভালো এবং বড় কোম্পানিগুলোতে সিভি জমা দিতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত যদি ভালো কোন কোম্পানিতে ইন্টার্ন করার সুযোগ নাও আসে তবে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় কতৃক কোন লিংকড কোম্পানিতেই ইন্টার্ন সম্পন্ন করতে হবে।

ইন্টার্নশিপের সময় ভালো পারফর্মেন্স থাকলে সেই কোম্পানিই জবের অফার করতে পারে। বেতন এবং অন্যান্য সুবিধা ভালো মনে হলে সেই কোম্পানিতেই জবের অফার গ্রহণ করা বেশি যুক্তিযুক্ত।
তবে ইন্টার্নশিপ চলাকালে বিভিন্ন কোম্পানিতে সিভি পাঠানো অব্যহত রাখতে হবে এবং ইন্টারভিউয়ের কলগুলোতে এটেন্ড করতে থাকতে হবে। পাশাপাশি মালয়েশিয়ান ভাষা রপ্ত করতে পারলে চাকরির নিশ্চয়তা অনেকাংশে বেড়ে যায়।
মালয়েশিয়ায় কোম্পানিগুলো অফিসিয়াল জবের জন্য অনেকগুলো ক্যাটাগরি থাকলে প্রধানত দুইটি ক্যাটাগরিতেই এমপ্লোয়ি নিতে আগ্রহবোধ করে।এমপ্লোয়ি-পাস ক্যাটাগরি-২ এবং ক্যাটাগরি-১ এই দুই ক্যাটাগরিতে কোম্পানিগুলো বিশেষ কোটায় ফরেন এমপ্লোয়ি হায়ার করার যোগ্যতালাভ করে।
একজন সদ্য স্নাতক পাস বা স্নাতোকত্তর পাস শিক্ষার্থী ক্যাটাগরি-২ ভিসার জন্য অফার পেতে পারে। সেক্ষেত্রে দুই বছর মেয়াদি একটি পদের জন্য চাকরির সুযোগ পাওয়া যাবে এবং প্রাথমিক বেতন আসবে প্রতিমাসে কমপক্ষে ৫ হাজার রিংগিত। দুই বছর পর কোম্পানি চাইলে চুক্তি নবায়ন করে পুনরায় দুই বছরের জন্য নিয়োগ দিতে পারে। অথবা অন্য কোন কোম্পানিতেও চাইলে মুভ করা যেতে পারে। ক্যাটাগরি-২ তে একজন এমপ্লোয়ি ডিপেন্ডেন্ট ভিসায় তার স্পাউস সহ থাকতে পারবে।
ক্যাটাগরি-১ ভিসায় মূলত অনেক বেশি অভিজ্ঞ কাউকে নিয়োগ দেয়া হয় এবং এর প্রথমিক বেতন হয় প্রতিমাসে কমপক্ষে ১০ হাজার রিংগিত। ৫ বছর পর্যন্ত নবায়নযোগ্য এবং তারপর চাইইলে কোম্পানি এই চুক্তি পুনরায় নবায়ন করতে পারে অথবা চাইলে এমপ্লোয়ি ভিন্ন কোন কোম্পানিতে যোগ দিতে পারে। এই ক্যাটাগরিতে ডিপেন্ডেন্ট ভিসায় বাবা-মা সহ থাকার সুযোগ রয়েছে।
এর বাইরেও ক্যাটাগরি-৩ তে একজন এসিস্ট্যান্ট হিসেবে নির্দিষ্ট পদে জবের সুযোগ আছে। তবে এই ভিসা দুই বছরের বেশি নবায়নযোগ্য না হওয়ায় কোম্পানি কিংবা এমপ্লোয়ি কেউই এটাতে আগ্রহবোধ করে না।
যেকোন ক্যাটাগরিতেই আপনি এমপ্লোয়ি ভিসায় জব করেন না কেন আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণে টেক্স দিতে হবে মালয়েশিয়ান সরকারকে। চাকরির নিয়োগের সময় আলোচনা করে নিতে হবে টেক্স আপনার হয়ে কোম্পানি পরিশোধ করবে কি না। চিকিৎসা ভাতা বা ইন্সুরেন্স আছে কি না এগুলোও আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করে নিতে হবে।
মনে রাখবেন আপনার এমপ্লোয়ি ভিসার সকল দায়িত্ব আপনার কোম্পানির। তাই কোম্পানিকে আপনার যোগ্যতা দ্বারা আপনাকে হায়ার করার প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে পারলে তবেই আপনি জবের জন্য অফার পাবেন বা নির্বাচিত হবেন এবং আপনার পারফর্মেন্সের মাধ্যমেই আপনাকে মূল্যায়ণ করা হবে। যোগ্যতা এবং কঠোর পরিশ্রম ছাড়া এ ধরণের সুযোগ সহজসাধ্য নয়।
লেখক-
বিজনেস এক্সিকিউটিভ, মেট্রো প্রিমিয়াম এসডিএন বিএইচডি, মালয়েশিয়া।
সাবেক ভিপি, এসআরসি, মাসা ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া।