ঈদযাত্রায় সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই
ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা পথে ভোগান্তি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। বরং বলা যায় দিন যত গড়াচ্ছে ভোগান্তি তত বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি। যাতায়াতের সুবিধা, যানবাহন কয়েকগুণ বাড়লেও ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ছে। লাখ লাখ মানুষ নাড়িরটানে বছরের দুই ঈদ রমজান ও কোরবানির সময় পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করতে বাড়িতে যেয়ে থাকেন।
প্রতিটি যানবাহনে ধারণ ক্ষমতার অধিক সংখ্যক যাত্রী নেওয়া হয়। যে কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। লঞ্চে ধারণক্ষমতার চেয়ে অধিক যাত্রী নেওয়ায় লঞ্চডুবির রেকর্ড আছে। রেলে তিল ধরণের ঠাঁই থাকে না। সরকারের নির্দেশনা এবং পুলিশের তদারকিও কম থাকে না। এরপর পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সহযোগিতা তো আছেই। কিন্তু তারপরও যা তাই। আসলে অধিকসংখ্যক যাত্রী নেওয়ায় সড়কে প্রাণহাণির ঘটনা ঘটে থাকে।
শুধু ঈদ নয়, বছরের যে কোনো সময়েই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। জানমালের ক্ষতির পরেও ঈদের আনন্দ মানুষকে পথের কষ্টকে ভুলিয়ে দেয়। কিন্তু প্রশ্ন এসেছে এতো যানবাহন থাকতে যাতায়াতে ভোগান্তি হবে কেন ? এর উত্তর খুঁজে পাওয়া না গেলেও সরকার প্রতি বছরই আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায় মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি লাঘবে।
চলতি জুলাই মাসের শেষ দিন অথবা পহেলা আগষ্ট কোরবানির ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কোরবানি সামনে রেখে ঈদের আগে ও পরে গণপরিবহন চলা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল। বিভ্রান্তি দূর করেছেন সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আসন্ন ঈদুল আযহায় দেশব্যাপী গণপরিবহন চলবে। তবে ভারী যানবাহন ঈদের তিন দিন আগে বন্ধ থাকবে। এর মধ্যে জরুরি সেবাসহ কয়েক ধরনের পণ্যবাহী যান চলবে।
করোনার কারণে ঈদযাত্রায় এবার গণপরিবহন বন্ধ রাখার ব্যাপারে কথা উঠেছিল। এতে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ায় সেটি পরিবর্তন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদের আগে ও পরে মোট ৯ দিন গণপরিবহন বন্ধ রাখার প্রজ্ঞাপন জারি করতে গত মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) চিঠি দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। কিন্তু পরদিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কাছ থেকে বার্তা আসে- সিদ্ধান্ত বদলে। ঈদে শর্তসাপেক্ষে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। তবে বন্ধ থাকবে পণ্যবাহী যান।
কিন্তু একই দিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বরাতে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, ঈদের আগে ৫ দিন এবং পরের ৩ দিনসহ মোট ৯ দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। কয়েক ঘণ্টা পর তিনি বক্তব্য বদল করে জানান- গণপরিবহন নয়, ঈদের আগের ৫ দিন ও পরের ৩ দিন সড়কে কোরবানির পশু, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া বাকি পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকবে। তিনি জানান, ঈদুল আজহায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও ফেরি চলবে। তবে পণ্যবাহী নৌযান বন্ধ থাকবে। বিষয়টি পরিস্কার না হওয়ায় সরকারের উচ্চমহলের সিদ্ধান্তের কথা জানালেন সেতুমন্ত্রী।
এদিকে করোনার বিস্তার রোধে গত ২৫ মার্চ গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। ৬৮ দিন পর ১ জুন থেকে ফের বাস ও অন্যান্য যাত্রীবাহী যান অর্ধেক আসন খালি রেখে চলছে। ঈদুল ফিতরে বাস, ট্রেনসহ সব যাত্রীবাহী যান বন্ধ থাকে। ২৪ মার্চ সন্ধ্যা থেকে ৬৮ দিন বন্ধ থাকার পর ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে যাত্রীবাহী ট্রেন চলছে। এবার ঈদুল আজহায় ট্রেন চলবে। তবে এখনকার মতোই সীমিত ও অর্ধেক আসন খালি রেখে চলবে।
একদিকে ঈদযাত্রায় রাস্তায় ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি অন্যদিকে করোনাভাইরাস- এই দুই কারণে সরকার আগে ভাগে বিষয়টি নিয়ে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং সময় উপযোগী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এবার কোরবানির ঈদের ছুটিতে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের মতো তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকরাও তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না।
করোনা মহামারির কারণে সরকারি ছুটির সঙ্গে মিল রেখে তাদের জন্যও কোরবানির ঈদের ছুটি ৩ দিন থাকছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সঠিক হয়েছে বলে আমরা মনে করি। ঈদ উৎসবে বাড়ি যাওয়া মানুষকে ঠেকানো যাবে না। কিন্তু এবার ভয়াবহ করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে এ ধরনের কড়াকড়ি আরোপ প্রয়োজন ছিল। গত রমজানের ঈদে এটা না করার ফলে ঘরমুখো মানুষের স্রোত ঠেকানো যায়নি। এর ফলাফল যেটা হয় তা হল করোনাভাইরাস জোরেশোরে বিপদ ডেকে এনেছিল। এ জন্য আমরা সরকারের এবারের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে তা কার্যকরে এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছি। সরকারের ভালো কাজে দেশের মানুষ সমর্থন জানাবে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা শুভ হোক- এ কামনা আমাদের।
লেখক: বিশিষ্ট সাংবাদিক, গবেষক, সম্পাদক ও প্রকাশক- ‘এইচএমনিউজ২৪.কম’, বার্তা ও টেলিভিশন প্যাকেজ অনুষ্ঠান প্রযোজনা এবং চলচ্চিত্র পরিবেশনা ও প্রযোজনা সংস্থা ‘হোম মিডিয়া’র চেয়ারম্যান।