করোনায় বিদেশফেরত প্রবাসীদের ব্যাপারে সরকারকে এখনই ভাবতে হবে

মহামারি করোনার কারণে প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকরা নানামুখী বিপদের সম্মুখীন। হাজার হাজার প্রবাসী চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। আরো শ্রমিক ফিরতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। অনেকে বিভিন্ন দেশে জেল খাটছেন। অনেকে চাকরি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে আবার কারোনার আগে ছুটি কাটাতে দেশে এসে আর কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না। চাকরি না থাকা, ভিসা পেতে জটিলতাসহ নানা কারণে তারা আর বিদেশে যেতে পারছেন না। ফলে চাকরি না থাকায় এরাও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সব মিলিয়ে প্রবাসী চাকরিজীবীদের কষ্টের মধ্যে তাদের সময় পার করতে হচ্ছে।
বিশ্বের ২৩টি দেশ থেকে সত্তর হাজার প্রবাসী দেশে ফিরছেন। করোনা শুরুর পর গত পহেলা এপ্রিল থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত তারা দেশে ফেরেন। তাদের কেউ এসেছেন কাজ হারিয়ে। কেউ ভিসার মেয়াদ নবায়ন না হওয়ায়, আবার অনেকে বিভিন্ন দেশে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফিরেছেন। বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক থেকে এ তথ্য জানা গেল।
তথ্য অনুযায়ী- মোট ২৩টি দেশ থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকরা দেশে ফেরত এসেছেন। সবচেয়ে বেশি কর্মী ফেরত এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। অমিরাত থেকে এসেছে ২৩ হাজার ৫০২ জন শ্রমিক। এদের মধ্যে ৩ হাজার ৩০৮ জন নারী শ্রমিক। সৌদি আরব থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭৬ জন নারীকর্মী ফেরত এসেছেন। দেশটি থেকে সবমিলিয়ে ১২ হাজার ৯৫০ জন ফেরত এসেছেন। তারা বিভিন্ন মেয়াদে কারা ভোগ শেষে আউট পাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন। আরব আমিরাতে কাজ-কর্ম না থাকায় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কর্মীদের ফেরত পাঠিয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ বলেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার আরব আমিরাত যেতে পারবেন। মালদ্বীপ থেকে ফিরেছেন ৭ হাজার ৭৫৯ জন। পর্যটননির্ভর মালদ্বীপে কাজ না থাকায় তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।
কুয়েত থেকে ফেরত এসেছেন ৭ হাজার ৩২৯ জন। ভিসা ও আকামার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সাধারণ ক্ষমার আওতায় ফিরেছেন তারা। ওমান থেকে ফিরেছেন ৩ হাজার ৬৪৫ জন। তারাও আউট পাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন। সিঙ্গাপুর থেকে ফেরা এক হাজার ৩৮২ জনের ভিসার মেয়াদ শেষে নবায়ন হয়নি।
এ জন্য তাদের ফিরতে হয়েছে। কাতার থেকে ৬ হাজার ৬৮ জন ফিরেছেন করোনার মধ্যে চাকরি না থাকায়। অন্য কাজ না পেয়ে তারা দেশে ফিরে এসেছেন। একই কারণে মালয়েশিয়া থেকে ফিরেছেন এক হাজার ৮৩৮ জন। ইরাক থেকে ফিরেছেন এক হাজার ৪১৯ জন। ইতালি থেকে ফিরেছেন ১৫১ জন। এরা দেশে এসে ছুটি কাটিয়ে গত ৬ জুলাই ইতালি ফিরে যান। কিন্তু করোনা সন্দেহে তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছে সে দেশের সরকার। তুরস্ক থেকে ফেরত এসেছেন ১ হাজার ৭৩০ জন। লেবাননের বৈরুতে বিস্ফোরণের পর কাজ হারিয়ে ফিরেছেন ১২০ নারীকর্মীসহ ৫৬৪ প্রবাসী। কাজ না পেয়ে ভিয়েতনাম থেকে ফিরেছেন ১২২ জন। কাজের মেয়াদ নবায়ন না হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১০০ জন ফিরেছেন। কাজ না পেয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আরও দুই হাজারের মতো কর্মী ফেরত এসেছেন দেশে।
চাকরি হারিয়ে যে সত্তর হাজার শ্রমিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দেশে ফিরে এসেছেন তারা এখন কি করবেন ? করোনা কবে যাবে তার কোনো ঠিক নেই। করোনার প্রভাব রোধের গতি দেখে প্রতীয়মান হয় যে- সহসা করোনা যাচ্ছে না। সহসা না গেলে দেশে ফেরত আসা শ্রমিকরা ফের কিভাবে বিদেশ যাবে সে প্রশ্ন ফেরত আসাদের মনে। তবে আশার কথা হল আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এবং প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের যৌথ স্বাক্ষরে বিভিন্ন নিয়োগকারী দেশকে কর্মী ফেরত না পাঠাতে ইতোমধ্যে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। করোনায় বেকার হয়ে পড়া কর্মীদের অন্যখাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে অনুরোধ করা হয়। এটা সরকার তরফের একটি ভালো উদ্যোগ। সংকট ঘনীভূত হওয়ার আগেই এ ব্যাপারে আরো কিছু করণীয় থাকলে সরকারকে সেটা এখনই করতে হবে।
লেখক: বিশিষ্ট সাংবাদিক, গবেষক, সম্পাদক ও প্রকাশক- ‘এইচএমনিউজ২৪.কম’, বার্তা ও টেলিভিশন প্যাকেজ অনুষ্ঠান প্রযোজনা এবং চলচ্চিত্র পরিবেশনা ও প্রযোজনা সংস্থা ‘হোম মিডিয়া’র চেয়ারম্যান।