রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

ভয়াবহ করোনার মধ্যেও বর্তমানে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহ উর্ধমুখী। বাংলাদেশের প্রবাসীদের আয় অর্থাৎ রেমিটেন্স দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অল্প সময়ের মধ্যে রেমিটেন্স বৃদ্ধির দেশের তালিকায় প্রথমকাতারে চলে আসছে। জনশক্তি বেড়ে যাওয়ায় রেমিটেন্সও বেড়ে যাচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে বর্তমান সরকারের সফল কূটনীতির কারণে।
লক্ষ্য করা গেছে- ২০১৯ সালে এক বছরে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছে বাংলদেশে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যার পরিমাণ এক হাজার ছিল ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার। চলতি বছর করোনার মধ্যেও রেমিটেন্স বাড়ছে আশানুরূপ গতিতে। তালিকায় থাকা অষ্টম অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে দেশে প্রায় এক হাজার ৫৫০ কোটি (১৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। রেমিটেন্সের গতিপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে ১৮ থেকে ১৯ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাওয়া যাবে এ বছরে। জিডিপির অনুপাতে রেমিটেন্স বাড়ানো জাতিসংঘ নির্ধারিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) লক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। পাশাপাশি রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ কমানো এবং বিদেশে শ্রমিকদের নিয়োগের খরচ কমানোও এসডিজির লক্ষ্য। বাংলাদেশ এই খরচ কমিয়ে আনতে গত বছরের জুলাই থেকে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। এ কারণে রেমিটেন্স বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী- ২০১৯ সালে রেমিটেন্স আহরণে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ নম্বরে। আর দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয়। ২০১৮ সালে রেমিটেন্স আহরণে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯। ওই বছর ১৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আহরণ করে এই অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। প্রায় একই পরিমাণ রেমিটেন্স আহরণ করে অষ্টম স্থানে ছিল ভিয়েতনাম। কিন্তু ২০১৯ সালে ভিয়েতনামকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ অষ্টম অবস্থানে উঠে আসে। ২০১৯ সালে ৮৩ দশমিক ১ বিলিয়ন রেমিটেন্স নিয়ে শীর্ষে ভারত। রেমিটেন্স আহরণে দ্বিতীয় অবস্থানে চীন। দেশটিতে ৬৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে গত বছর। ৩৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আহরণ করে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে মেক্সিকা। ৩৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আহরণ করে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ফিলিপাইন। পঞ্চম অবস্থানে থাকা মিসর ২৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পেয়েছে। নাইজেরিয়া ২৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার আহরণ করে রয়েছে ষষ্ঠ অবস্থানে। সপ্তম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। ২০১৯ সালে পাকিস্তান রেমিটেন্স আহরণ করেছে ২২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
গত বছর বাংলাদেশ থেকে এক বিলিয়ন ডলার কম রেমিটেন্স আহরণ করে অষ্টম থেকে নবমে গেছে ভিয়েতনাম। দেশটি গত বছর ১৭ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আহরণ করেছে। আর ইউক্রেন ১৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স আহরণ করে দশম অবস্থানে রয়েছে।
সব মিলিয়ে বলা যায়- রেমিটেন্স প্রবাহের দিক থেকে বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মূলত জনশক্তি রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসীদের পাঠানো অর্থও বেশি আসছে দেশে। করোনার জন্য সৌদি আবরসহ গোটা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। করোনার মধ্যে যারা দেশে এসেছিলেন তারা কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। তাদের জন্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে সৌদিতে অনেক শ্রমিক যেতে পারছেন। সৌদি সরকার তাদের ভিসা দিচ্ছে। বাংলাদেশ এবং সৌদি সরকারের মধ্যে আলোচনার পর এটা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশে অর্থনীতির ভিত যে আজ মজবুত অবস্থানে রয়েছে তা অনেকটা প্রবাসীদের পাঠানো অর্থেই সম্ভব হয়েছে।
সুতরাং জাতীয় উন্নয়নে প্রবাসীদের রেমিটেন্স আমাদের জন্য বড় ভরসা। আর এই ভরসাকে কার্যকর করতে সরকারের উদ্যোগের কোনো ঘাটতি নেই। বর্তমান সরকারের দূরদর্শিতা, সঠিক সিদ্ধান্ত এবং বাস্তবমুখী পরিকল্পনা প্রণয়ন করায় আজ দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়ে চলেছে। আমরা আশা করবো সরকার আরো বেশি জনশক্তি রপ্তানি করে দেশে রেমিটেন্স বৃদ্ধি করতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেবে।
লেখক: বিশিষ্ট সাংবাদিক, গবেষক, সম্পাদক ও প্রকাশক- এইচএমনিউজ২৪.কম’, বার্তা ও টেলিভিশন প্যাকেজ অনুষ্ঠান প্রযোজনা এবং চলচ্চিত্র পরিবেশনা ও প্রযোজনা সংস্থা ‘হোম মিডিয়া’র চেয়ারম্যান।