বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদ এর ১০ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত

আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুব নেতৃত্ব’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদের ১০ম অধিবেশন অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৯ আগস্ট) বিকাল ৩টার দিকে বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদ ও ইয়ুথ অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার বাংলাদেশ’সহ প্রায় ৪০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে অধিবেশনটির আয়োজন করা হয়।
অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী ও স্বাধীনতা পুরস্কার প্রাপ্ত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, সিনিয়র সচিব ও অর্থনীতিতে একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, শিক্ষা ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর মো. নজরুল ইসলাম খান, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার এমপি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য তামান্না নুসরাত বুবলী এমপি, পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. মো. জসিম উদ্দিন ও কলেজ অব হোম ইকোনোমিকসের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইসমাত রুমিনা।

বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় সম্পদ হচ্ছে দেশের এক তৃতীয়াংশ যুব সমাজ। সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে ৫ কোটি। এই যুব জনগোষ্ঠীকে উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রে রাখার দাবি জানিয়ে ছায়া সংসদে ঢাকা-৬ আসনের বিরোধী দলীয় যুব সংসদ সদস্য মহসিনা আক্তার বন্যা ‘আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুব নেতৃত্ব’ এই বিষয়ের ওপর একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই প্রস্তাবের ওপর যুব সংসদ নেতা ঢাকা-১২ আসনের রাইসুল মিল্লাত সাফকাত, বিরোধী দলীয় নেতা চট্টগ্রাম- ৮ আসনের আজমেরি রহমান সিনথিয়াসহ মোট ১৪ জন যুব সংসদ সদস্য বক্তব্য তুলে ধরেন।

যুব সংসদ সদস্য মহসিনা আক্তার বন্যা তার প্রস্তাব উত্থাপনের পাশাপাশি ৩টি সুপারিশ তুলে ধরেন-১. আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর, জ্ঞানভিত্তিক ও মানবিক বাংলাদেশ গঠনে অবিলম্বে দেশে ‘ইয়ুথ পার্লামেন্ট’ গঠন এবং জাতীয় উন্নয়নে যুবাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা হোক। ২. ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ’সহ স্থানীয় সরকারের সকল ক্ষেত্রে যুব প্রতিনিধি থাকা বাধ্যতামূলক করা হোক। ৩. উন্নত, সমৃদ্ধ ও সুখী সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য সর্বস্তরে যুব সহায়ক নীতিমালা গ্রহণ করে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথম ‘যুববান্ধব’ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হোক।
আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, বাংলাদেশ একটি যুববান্ধব দেশ। বর্তমান সরকার এদেশের যুব সমাজকে সব থেকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়। যুব উদ্যোক্তা তৈরিতে আমরা কাজ করছি। যুবাদের উন্নয়নে আমরা যুবনীতি ২০১৭ প্রণয়ন করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেও এদেশের যুব সমাজকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন এবং তাদের জন্য কাজ করতে চান।

অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, তরুণরাই আগামীর ভবিষৎ। দেশের অর্থনীতির পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এদেশের তরুণ সমাজ। তরুণদের আমরা বরাবরই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। তরুণদের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যামে বিনা জামানতে সহজ শর্তে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা করে ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ‘উন্নত রাষ্ট্র’ হওয়ার লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ২০৪১ সালকে ঘিরে ‘দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করেছে। এর বাইরে বাংলাদেশ ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ শিরোনামে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আমরা যুব সমাজের পক্ষে সরকারের ঘোষিত এই পরিকল্পনাসমূহকে স্বাগত জানাই, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এই প্রশ্নটাও সবিনয়েও করতে চাই যে, দেশের যুব সমাজকে এই পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নে কিভাবে সম্পৃক্ত করা হবে এবং তাদের ক্ষমতায়নে সরকার ইতোমধ্যে কি কি পরিকল্পনা নিয়েছে? দেশের যুব সমাজ সরকারের কাছে সবিনয়ে এই প্রশ্নটা রাখতে চাই, সরকার আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুব নেতৃত্বের ভূমিকাকে কিভাবে দেখছে? সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদ থেকে আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব রেখেছি সেগুলো যেন বর্তমান সরকার গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেন।
উল্লেখ্য, যুবদের মধ্যে নেতৃত্বের বিকাশ, গণতান্ত্রিক চর্চা বৃদ্ধি, তারুণ্যের অগ্রযাত্রায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলায় প্রণোদনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মহান জাতীয় সংসদের আদলে ২০১৪ সাল থেকে যুব ছায়া সংসদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং এ পর্যন্ত ১০টি অধিবেশন সম্পন্ন হয়েছে।