প্রবাসী শ্রমিকদের চাকরি রক্ষা করতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে

মহামারি করোনার প্রভাব প্রবাসী শ্রমিকদের ওপরও পড়েছে। করোনার কারণে সৌদিআরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঠেকাতে সে দেশ থেকে বিদেশি শ্রমিকদের তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এজন্য অনেককে চাকরি থেকে ছাটাই করে তাদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া যারা ছুটিতে দেশে এসেছিলেন ছুটির মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও তাদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। করোনার আগে প্রায় একলাখ লোক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাবার জন্য ভিসা করেছিলেন। তাদের ভিসা প্রস্তুত থাকলেও বিদেশ যাবার অনুমতি তারা পায়নি। এদের বিদেশ যাওয়াও অনেকটা অনিশ্চিতার মুখে পতিত হয়েছে।
মহামারি করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৭৪২ জন প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে গেলে লাখ লাখ প্রবাসীকে দেশে ফেরত আসতে হবে- এমনটা আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেল- বর্তমানে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত হয়েছেন। এর মধ্যে সৌদিআরবে সবচেয়ে বেশি। সেখানে ২০ লাখ ৮৪ হাজার বাংলাদেশি কর্মরত। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছেন ১৩ লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশি।
এছাড়া কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ইরাক, লিবিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুর এবং ইতালিসহ ইউরোপের অনেক দেশে বাংলাদেশিরা কর্মরত। ইউরোপের মধ্যে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কর্মরত আছেন। সবাই এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনানিপাত করছেন। চাকরি হারিয়ে অনেকেই ইতোমধ্যে বেকারত্বের কষাঘাতে পিষ্ঠ হয়েছেন। বেসরকারি সংস্থা রিফিজিউ অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিচার্স ইউনিটি’র তথ্য অনুযায়ী- ৭৮ শতাংশ অভিবাসী শ্রমিককে জোর করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই ফেরত এসেছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। এছাড়া ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল থেকেও অনেক শ্রমিক ফেরত এসেছে। এভাবে শ্রমিক পাঠানো অব্যাহত থাকলে রেমিট্যান্স প্রবাহ অন্তত ২২ শতাংশ কমে যেতে পারে।
বৈদেশিক মুদ্রা আমাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে রেখেছে। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরা টাকা না পাঠালে অর্থনীতিতে বড় ধরণের একটা ধস নামবে। এমনিতেই করোনায় দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ধ্বংস হওয়ার পথে। সরকারের দূরদর্শী নীতির কারণে আমরা অনেকটা ভাল অবস্থায় আছি অন্যান্য দেশের তুলনায়। এ অবস্থায় বিদেশের শ্রমবাজার যাতে নষ্ট না হয় তার ব্যবস্থা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সরকারের নিয়ম মেনে সাধারণত বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সির (বায়রা) মাধ্যমে বিদেশে শ্রমিকরা গিয়ে থাকে। এই বায়রা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদেশে কর্মরত বৈধ শ্রমিকরা যাতে সেদেশে থাকতে পারে তার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এজন্য সরকারকে সহযোগিতা করতে চায় তারা। যেসব শ্রমিক ছুটিতে দেশে এসে যেতে পারছেন না তারা যাতে কর্মস্থলে ফিরে যেতে পারেন সেজন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায় বায়রা। এছাড়া যাদের ভিসা আন্ডারপ্রসেস অবস্থায় রয়েছে তাদের পাঠানোর ব্যবস্থা করা।
বায়রার তথ্য অনুযায়ী- তাদের সদস্যভুক্ত ১ হাজার ৬শ’ কোম্পানির মধ্যে এ পর্যন্ত ৩১২টির অধীনে ৮০ হাজার ভিসা প্রক্রিয়াধীন। এর বাইরে আরো রয়েছে। সব যোগ করলে প্রায় ১ লাখ হবে। এদের বিদেশ পাঠানোর ব্যাপারে নিজ নিজ দেশের সরকারের সঙ্গে কথা বলবে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। বাকি কাজ করবে বায়রা। সরকারপক্ষের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ ব্যতীত প্রবাসীদের বিদেশে ফেরত যাওয়া এবং তাদের চাকরি টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হতে পারে। আমরা বলতে চাই- প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো টাকায় আমাদের অর্থনীতির গতি চাঙ্গা রয়েছে। এদের অর্থ পাঠানো বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যমান ভয়াবহ করোনা দেশের অর্থনীতিকে একবারে পঙ্গু করে দেবে। সুতরাং কালবিলম্ব না করে প্রবাসী শ্রমিকদের চাকরি রক্ষার ব্যাপারে সরকারকে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। জনগণের সরকার জনগণের জন্য কাজ করবে- এ প্রত্যাশাই আমাদের।
লেখক: বিশিষ্ট সাংবাদিক, গবেষক, সম্পাদক ও প্রকাশক- ‘এইচএমনিউজ২৪.কম’, বার্তা ও টেলিভিশন প্যাকেজ অনুষ্ঠান প্রযোজনা এবং চলচ্চিত্র পরিবেশনা ও প্রযোজনা সংস্থা ‘হোম মিডিয়া’র চেয়ারম্যান।