বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদ এর একাদশ অধিবেশন অনুষ্ঠিত
বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে সম্প্রতি দেশের ৪৫ টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে “খাদ্য ও পুষ্টির অধিকার এবং মুক্তির সংগ্রাম এগিয়ে নিতে তরুণদের দায়িত্ব দিতে হবে”
প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদ এর একাদশ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
বান্দরবান আসনের যুব সাংসদ ইউ অং সাইন মারমা যুব ছায়া সংসদে এই বিষয়ের ওপর প্রস্তাব উত্থাপন করে তিনি বলেন, সংবিধানের ১৫ (ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের সকল নাগরিকের জন্য খাদ্যসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব এবং ১৮ (ক) অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্রের প্রাথমিক দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। সুতরাং দেশের প্রত্যেক নাগরিক খাদ্যের যথাযথ প্রাপ্যতার পাশাপাশি সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার রাখে।
এছাড়াও ইউ অং সাইন মারমা বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশ যুবদের উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদে ১. খাদ্য ও পুষ্টির অধিকার ও মুক্তির সংগ্রাম এগিয়ে নিতে তরুণদের দায়িত্ব দেয়া হোক। ২. জাতীয় ইস্যু বা কৃষিখাতের উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় ইয়ূথ কাউন্সিল গঠন করা হোক। ৩. কৃষিখাতে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য কৃষি উদ্যোক্তা ঋণের ব্যবস্থা করা হোক। ৪. খাদ্য ও পুষ্টি অধিকার আইন প্রণয়ন করে তার যথাযথ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা হোক। – এই ৪ টি প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
উত্থাপিত প্রস্তাবের আলোকে সংসদ নেতা আদিবা কবির সৃষ্টি বলেন, আমাদের সরকার বরাবরই যুবদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। কৃষিকে আধুনিকায়ন ও যুবদের সম্পৃক্তকরণের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের সরকার জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নীতি ২০২০ প্রণয়ন করেছে।
যুব বিরোধী দলীয় নেতা মালিহা মেহেরীন বুশরা বলেন, দেশের এক তৃতীয়াংশ যুবদেরকে উন্নয়ন পরিকল্পনার বাইরে রেখে আমরা কখনো ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব না। সেজন্য যুবদেরকে উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসতে হবে। উত্থাপিত প্রস্তাবের ওপরে সরকারি ও বিরোধী দলীয় মোট ১৫ জন সংসদ তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে গত চার দশকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুন কিন্তু খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে তিনগুন।
আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পুর্ণ হলেও এখনো সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতকরণে অনেক পিছিয়ে আছি। এখনো বাংলাদেশে প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী সুষম খাদ্য গ্রহণে ব্যর্থ, প্রতি ৬ জনে একজন পর্যাপ্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেতে পারে না। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ তরুণ। এই বিপুল সংখ্যক তরুণ বা ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্টকে কাজে লাগিয়ে আমরা একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।
উল্লেখ্য যে যুবদের মধ্যে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক চর্চা, নেতৃত্বের বিকাশ, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদ কাজ করে যাচ্ছে। এই লক্ষ্য অর্জনে, মহান জাতীয় সংসদ এর আদলে ২০১৪ সাল থকে বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদ এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে আয়োজিত অধিবেশনগুলোতে ৩০০ টি নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে ৩০০ জন এবং সংরক্ষিত ৫০ টি আসনসহ মোট ৩৫০ জন যুব-যুব মহিলা প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে সংসদীয় রীতি মোতাবেক আনীত বিষয়বস্তুর উপরে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থি ছিলেন বিসেফ ফাউন্ডেশন এর সভাপতি কৃষি বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিন, জাগো নারী উয়ন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শিউলি শর্মা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাস্তব এর নির্বাহী পরিচালক রুহি দাস, ইপসার নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান, প্রত্যাশা ২০২১ ফোরাম এর সভাপতি এস এম আজাদ হোসেন, হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড এর কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন ও সময়ের দাবির সম্পাদক রেজাউল করিম হাশমী।