মালয়েশিয়া থেকে দেশীয় শাড়ি নিয়ে কাজ করছেন পাপিয়া

পাপিয়া আক্তার মালয়েশিয়া প্রবাসী। পাপিয়ার জন্ম নওগাঁ জেলায়। তার বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরিজীবি। বাবার চাকুরীর সুবাদে পাপিয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ঘুরেছে। এসএসসি দিয়েছেন ঢাকার সিদ্বেশ্বরী গার্লস হাই স্কুল থেকে। বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ ও মহাবিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। ২০০৬ সালে মাস্টার্স এর পর বিয়ে হয় পাপিয়ার।
পাপিয়ার স্বামী মাহফুজ কায়সার অপু পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার।তিনি বুয়েট থেকে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ হতে পাশ করেছেন। বাংলাদেশে রবি (একটেল)এ ছিল সার্ভিস এসুরেন্স ডিপার্টমেন্ট এর হেড হিসেবে। সে বর্তমানে মালয়েশিয়াতে এরিকসন এ ট্রান্সফরমেশন ডিপার্টমেন্ট এর হেড হিসাবে আছেন।

প্রত্যেক মানুষের জীবনে একটা স্বপ্ন থাকে। একটা লক্ষ্য থাকে। সেই লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে এগিয়ে যায় পাপিয়া। ছাত্রজীবন থেকেই পাপিয়ার ইচ্ছা ছিল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। চাকরি করার। তার সব সময় মনে হত মাস্টার্স শেষ হলে খুব স্মার্ট একটা জব করবো। খুব টিপটপ হবে সেই কাজের পরিবেশ এবং সহকর্মীরাও। তার স্বামীর সাপোর্ট পাপিয়া তার স্বপ্নের চাকুরী জীবন শুরু করে ইফাদ গ্রুপে। ২০০৮ সালে তার ছেলে জন্মের ঠিক আগে চাকুরী ছেড়ে দেয় সে। এরপর তার স্বামীর চাকরীর সুবাদে পাড়ি জমান মালয়েশিয়াতে। শুরু হল প্রবাস জীবন।
পাপিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মালয়েশিয়াতে আমার দ্বিতীয় সন্তান, আমার মেয়ের জন্ম হয়। আমার ছোট ২টা বাচ্চার কথা চিন্তা করে আর জবের চেষ্টা করিনি মালয়েশিয়াতে। এই বাচ্চাদের কথা চিন্তা করেই ঘরে বসে কাজ করার কথা ভাবলাম। ঘরে থেকেই বাচ্চাদের প্রপার টেক কেয়ার করে যেনো নিজে একটা কিছু করতে পারি সেই চেষ্টা করছিলাম। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কিছু কাস্টমাইজ শাড়ী এনে ফেসবুক পেজ 'পাপিয়া'স ক্লোজেট' থেকে এখানে (মালয়েশিয়া) তে বিক্রির চেস্টা করি এবং খুব ভালো সাড়া পাই। এরপর এক এক করে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইতালি, সুইডেনসহ আরো বেশ কয়েকটা দেশে চলে গেল আমার শাড়ী। তখন খুবই আগ্রহ পেয়ে গেলাম দেশীয় শাড়ী নিয়ে কাজ করার। এর মধ্যেই পেয়ে গেলাম উদ্দোক্তাদের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম ‘উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম’ উই এর যা ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স গ্রুপ।

স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম আমার পণ্যকে নিয়ে। একজন উদ্যোক্তা হতে গেলে যে প্রোপার গাইড লাইন দরকার, সেটা পেয়েছি উইতে এসে। দেশীয় শাড়ী নিয়ে কাস্টমাইজ করাটা যেন আমার নেশা হয়ে গেল। শাড়ীতে নতুনত্ব আনা ও ভিন্নভাবে প্রেজেন্ট করার চেষ্টা আমার সব সময়। আমি যেহেতু মালয়েশিয়া থাকি, আমার কাজে সাহায্য করে ঢাকা থেকে আমার বোন। সেও একজন উদ্যোক্তা। আমার কাজের কৃতিত্বটাও তারও। কারণ সে না থাকলে আমি প্রবাসে বসে আমার উদ্যোগকে হয়তো এতটা সাফল্যের সাথে এগিয়ে নিতে পারতাম না। প্রবাসে বসেই কারখানা থেকে শাড়ী কালেক্ট করা থেকে শুরু করে শাড়ীর ডিজাইন করা প্রতিটি কাজ খুব ভালবেসে করি। প্রবাসী হিসেবে খুব চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার টা’।
ভবিষৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার শাড়ী নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি প্রতিনিয়ত। আমার স্বপ্ন আমার প্রিয় দেশীয় শাড়িগুলোকে ছড়িয়ে দিব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। দেশকে ভালবেসে, দেশের পণ্য দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেবার প্রয়াসে নিরলস প্রচেষ্টায় আমার’।