প্রবাসী শ্রমিকদের ভোগান্তি,সচেতন মহলের দায়িত্ব

দক্ষিন এশিয়ায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম। বাংলাদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান রয়েছে এই দেশটিতে। মানসম্মত বেতন আর কিছুটা আত্মতৃপ্তির ডেকুর তুলতে দেশের অনেক বেকার পাড়ি জমায় মালয়েশিয়াতে। কিন্তু দেশটিতে প্রবেশের পর নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অধিকাংশ শ্রমিক হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। যথাযথ আইন ও পদ্ধতি না জানার কারনে এবং সঠিক পরামর্শের অভাবে অনেকেই ভুল পথে হাটতে শুরু করেন। যার প্রেক্ষিতে আইনী জটিলতায় পড়ে কারাবরনসহ দূর্বিসহ জীবনে পতিত হন প্রবাসীরা ।
বাংলাদেশের মত মধ্যম আয়ের একটি দেশ থেকে জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়া পাড়ি জমানো দোষের কিছু নয়। আর বিদেশে প্রবেশ করে সঠিক আইন ও যথাযথ পদ্ধতি না জানাটাও অপরাধ নয়। কিন্তু আর্শ্চযের বিষয় কতিপয় শিক্ষিত, বিত্তশালী প্রবাসী ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ তাদের এই না জানা বিষয়কে পুজি করে সহযোগীতার পরিবর্তে এ সকল শ্রমিকদের অবজ্ঞা, কখনো কখনো মারাত্মক কটাক্ষ করে রীতিমত দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন যা কাংঙ্খিত নয়। আমার জানামতে মালয়েশিয়াতে অনেক শিক্ষিত,মেধাবী,বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ বাংলাদেশী ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন।
হয়তো দেশের ভাইদের প্রতি সহযোগীতার মানসিকতাও রয়েছে অনেকের। তবে অধিকাংশের ভয় একটাই এদেরকে সহযোগীতা করতে গিয়ে নিজেই না সমস্যায় পড়ে যাই। আর এই দূর্বল মানসিকতাই বিবেক বর্জিত হয়ে স্বার্থপরের মতো বাচঁতে শেখায়। এভাবে হয়তো বেচেঁ থাকা সম্ভব কিন্তু সহানুভুতি,আত্মতৃপ্তি নিয়ে বেচেঁ থাকা অসম্ভব। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, আপনার মেধা, আপনার অভিজ্ঞতা দেশের জনগোষ্ঠীর কল্যানে ব্যয় না করাও দেশের সাথে একধরনের বিশ্বাসঘাতকতা।
অনেক শিক্ষিত,বিত্তশালী প্রবাসী বাংলাদেশী ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ অনুধাবন করেন না যে, মালয়েশিয়াতে এই বাংলাদেশী শ্রমিকদের সাথে আপনার মর্যাদাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যতক্ষননা আপনি আপনার জীবন থেকে বাংলাদেশ নামক শব্দটা মুছে ফেলতে পারছেন, যা অধিকাংশের ক্ষেত্রেই অসম্ভব। তবে দোষ যে শ্রমিকদের নেই তাও নয়। তবুও স্বল্পশিক্ষিত হিসেবে তাদের এই বিষয়গুলো মার্জনার দৃষ্টিতে দেখাটাই কাম্য।
সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলছে দেশ আর এ সমৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি প্রবাসীরা যা অস্বীকার করার উপায় নাই। প্রবাসীদের সুখ, দুঃখ দেখার জন্য সরকার বিভিন্ন দেশে দূতাবাস চালু রেখেছেন যা মালয়েশিয়াতেও বিদ্যমান। তবে শিক্ষিত, বিত্তশালী, প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহযোগীতা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে দূতাবাসকেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। যথাযথ আচরন, সঠিক নিয়ম পদ্ধতি পালনের মাধ্যমে দূতাবাস এর সর্বাত্মক সহযোগিতা পাওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি যার প্রতিফলন আমি দেখেছি।
ইন্দোনেশিয়ান সরকারের বৃত্তি নিয়ে ইন্দোনেশিয়াতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনকালীন সময়ে আমার বৃত্তিসংক্রান্ত একটি সমস্যা সমাধানে তৎকালীন ইন্দোনেশিয়াতে অবস্থানরত বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের আন্তরিকতা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। সুতরাং কোন অজুহাত নয়, উন্নত সমৃদ্ধশালী আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে শুধু মালয়েশিয়াতেই নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের সাধ্যনুযায়ী সহযোগীতা প্রদান সকল শিক্ষিত, বিত্তশালী প্রবাসী বাংলাদেশীদের নৈতিক দায়িত্ব যা অস্বীকার করা অনাকাংঙ্খিত।
লেখক: হাচিব মোহাম্মদ তুষার, আইনবিদ ও পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি পুত্রা মালয়েশিয়া।