একজন প্রবাসী নারী শেফ এর সংগ্রামী জীবনের গল্প
তানজিনা আফরোজ নীশো একজন সংগ্রামী নারী ও একজন আন্তর্জাতিক শেফ। তিনি ইতালি ও মালয়েশিয়াতে দীর্ঘ ১৩ বছর রেস্টুরেন্টে চাকরি করেছেন। ২০০২ সালে তিনি ইতালির মাস্মিমো আলবেরিনি ইন্সটিটিউট থেকে হোটেল ম্যানেজমেন্টের একটি কোর্স করেন। তানজিনা আফরোজ নীশোর গ্রামের বাড়ি টাংগাইল। তার জন্ম নানু বাড়ি রংপুরে। এখন রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও এ থাকেন।
নীশো ১৯৯৫ সালে আদমজী গার্লস হাই স্কুল থেকে এস এস সি পাশ করেন। এরপর ১৯৯৬ সালে পরিবারের মতে নীশো ইতালি প্রবাসীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। এক্ষেত্রে নীশোর লেখা পড়ায় কিছুটা ব্যঘাত ঘটে। বিয়ের এক বছর পর ১৯৯৮ সালে নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন তিনি।
এরপর ১৯৯৯ সালে প্রবাসী স্বামীর সঙ্গে ইতালি যান তিনি। ২০০০ সালে প্রেগনেন্ট অবস্থায় ইতালি থেকে নেদারল্যান্ড চলে যান এবং সেখানে কিছুকাল অবস্থান করেন নীশো। ২০০০ সালে ছেলের জন্ম হলে এবং বাচ্চার বয়স যখন ৩ মাস হয় তখন নীশো লন্ড্রিতে কাজ করেন এবং তখন তিনি তার স্বামীকে অগ্যাত এক কারনে ত্যাগ করে সংগ্রামী জীবন শুরু করেন।
তারপর তিনি চলে আসেন ইতালিতে। সেখানে তিনি তার খরচ চালানোর জন্য ভোর ৪টা থেকে বিকাল ৫:৩০ পর্যন্ত রেস্টুরেন্ট এ কাজ করতেন এবং হোটেল ম্যানেজম্যান্টে সন্ধা ৬:৩০ থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ক্লাস করতেন। এরপর ২০১৪ সালে তিনি তার ছেলের সম্মতিতে আবার দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন এবং তার দ্বিতীয় স্বামীসহ নীশো মালয়েশিয়াতে চলে যান।
মালয়েশিয়াতে তিনি একটা মিনি সুপার শপ শুরু করেন কিন্তু ভিসা জটিলতার কারনে শপটি বেশিদিন চালাতে পারিনি। তারপর ২০১৭ সালে দেশে ফিরে আসেন নীশো। এরপর নীশো বেভান্দা ভেনেজিয়ানা নামে একটি রেস্টুরেন্ট খোলেন। তবে সাফল্যের হাতছানি পেতেই মহামারি করোনা ভাইরাসের কারনে নীশোর স্বপ্ন মলিন হয়ে যায়। কিন্তু অদম্য সাহসী, সংগ্রামী নারী নীশো দমিয়ে না থেকে ফেসবুকের পেজের মাধ্যমে আবার তিনি তার অনলাইন ব্যবসা চালু করেন।
সেখানে আবার দেখা দিচ্ছে সাফল্য নামক কাঙ্খিত বস্তুটি। ফেসবুক পেজ Tanzina’s Cookery & Cakery এর মাধ্যমে নীশো হোমমেড খাবার যেমন : থাই, চাইনিজ, ইতালিয়ান, দেশী এছাড়াও ফ্রোজেনফুড, রেডিমিক্স মশলা (বিরিয়ানি, তেহারি, রোস্ট, কাবাব) ঘিয়ে ভাজা লাচ্ছা সেমাইসহ বিভিন্ন প্রকার মিস্টি, বেকারি জাতীয় খাবার পার্টি কেক, থিম কেক, ব্রেড, বান ইত্যাদি বিক্রি করে থাকে।
Tanzina’s Cookery & Cakery সম্পর্কে নীশো এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার বিজনেসের জন্য আমার স্বামী সবসময়ই আমাকে খুব উৎসাহ দেন। এছাড়াও আমার ভাই বোন আমাকে যথেস্ট সাপোর্ট করে, কিন্তু আমি বলব আমার সবচেয়ে বড় আরেকটা সাপোর্ট আসে উই (WE) থেকে। আমার সব সাহসের এবং শক্তির উৎস উই (WE)।
আমরা ইতিমধ্যেই ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে কিছু জেলায় খাবার এবং মসলা পৌঁছানোর কাজ করেছি। সামনে আরও অনেক ব্যাপক আকারে কাজ করার ইচ্ছা আছে । আমার তৈরী মসলা এবং শুকনা খাবার বিদেশেও যাবে বলে আমি প্রত্যাশা করছি।করোনার ক্রান্তিকাল কেটে গেলেই আমি আমার স্বপ্নের রেস্টুরেন্টটি আবার চালু করবো । আপনাদের সবার সহযোগীতা আশা করছি। সবাই পাশে থাকবেন এবং আমার জন্য দোয়া করবেন।