সংগীত অঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান শেরপুরের রিয়া

গত কয়েক বছর ধরে আধুনিক বাংলা গানের জগতে অন্যতম কণ্ঠশিল্পী নুসরাত জাহান রিয়ার কণ্ঠের মিষ্টতা, সঙ্গীত পরিবেশনের স্বকীয়তায় করেছেন হাজার হাজার শ্রোতার মন জয় করে । সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সাথে এই শিল্পী তার শৈশব, কৈশোর, সঙ্গীত জীবন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। বর্তমানে শেরপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী তিনি।
এনটিভি অনলাইন :এনটিভি মালয়েশিয়াতে তোমাকে ধন্যবাদ।
কণ্ঠশিল্পী রিয়া: আপনাকেও অশেষ ধন্যবাদ।
এনটিভি অনলাইন : কেমন আছো তুমি ?
কণ্ঠশিল্পী রিয়া: মহামারীর এই দিনে সৃষ্টিকর্তা আমাকে অনেক অনেক ভালো রেখেছেন।
এনটিভি অনলাইন : তোমার সংঙ্গীত জগতের শুরুটা হয়েছিল কবে?
কণ্ঠশিল্পী রিয়া : পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় আমার সংঙ্গীত জগতের শুরুটা হয়েছিল।
এনটিভি অনলাইন : তোমার গানের হাতের খড়ি কিভাবে?
কণ্ঠশিল্পী রিয়া:আমার বাবা যখন গুনগুন করে গান গাইতেন,তখন বাবার সাথে তাল মিলিয়ে আমিও গুনগুন করে গান গাইতাম।এভাবেই আমার বাবার থেকে গানের হাতে খড়ি।
এনটিভি অনলাইন : তোমার সংঙ্গীত জগতের শুরুটা হয়েছিল কিভাবে?
কণ্ঠশিল্পী রিয়া: তখন আমি মীরগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ি। স্কুল থেকে গানের প্রতিযোগিতায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেই প্রতিযোগিতায় লোকসঙ্গীত গেয়ে প্রথম হই আর সেখান থেকেই আমার গানের জীবনের পথটা শুরু।
এনটিভি অনলাইন : গান গাওয়া ছাড়া তোমার জীবনে আর কোনো কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?
কণ্ঠশিল্পী রিয়া: হ্যাঁ আছেতো।কণ্ঠশিল্পী হওয়ার বাইরে আমার একটাই ইচ্ছে বাচ্চাদের গান শিখাবো, যেমনটা আমি নিজে শিখেছিলাম।
এনটিভি অনলাইন : গান শেখা নিয়ে তোমার কোনো বাঁধা ছিল কি না?
কণ্ঠশিল্পী রিয়া: গান শিখতে গিয়ে আমার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। মেয়ে মানুষ গান করবো এটা নিয়ে নানা মানুষের নানানরকম মন্তব্য ছিলো। যা পেছনে ফেলে এসেছি, গান শেখার সুযোগ পেতাম না।ওস্তাদদের কাছে গান শিখার জন্য তাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি এমন অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে আমার। আমি চাইনা আমার মতো এমন স্মৃতি থাকুক আর কারও মনে।
এনটিভি অনলাইন : করোনার এই দিনে কিভাবে সময় কাটছে তোমার ?
কণ্ঠশিল্পী রিয়া : করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর আগেও প্রচুর স্টেজে গান গাওয়ার অনুষ্ঠানের চাপ ছিলো, কেননা গানের অনুষ্ঠানের মোক্ষম সময় চলছিল। তাছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী (মুজিববর্ষ) উপলক্ষে অসংখ্য অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার কথা ছিল, তবে হঠাৎ করে মহামারির এই প্রাদুর্ভাবের ফলে বন্ধ হয়ে যায় সব। এখন বাড়িতে বসেই গান করছি, রেওয়াজ করছি, আর নানারকম কাজ করছি, মায়ের কাছে রান্না শিখছি, ছবি আকাঁ, টিভি- নাটক, সিনেমা, ফেসবুক লাইভসহ নানাকাজে সারাদিন ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করছি, বাসার সকলের সাথে সময় করে ভালোই কেটে যাচ্ছে দিনগুলো।
এনটিভি অনলাইন : সংগীত নিয়ে ভবিষৎ পরিকল্পনা আছে কি, থাকলে সেটি কি ধরণের ?
কণ্ঠশিল্পী রিয়া : সংগীত নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের স্বপ্ন দেখি। আর সত্যি বলতে কি, আমি এখনো কণ্ঠশিল্পী হতে পারিনি, শিখছি মাত্র। তবুও সকলের ভালোবাসায় যতোটুকু হয়েছে ততোটুকু অনেক কষ্ট করেই। আমার পরিবার আমাকে সাহস আত্মবিশ্বাস দিয়েছিল বলেই আজ আমি এতোদূর আসতে পেরেছি। আমার মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম, শ্রদ্ধেয় অভিভাবক সাংবাদিক শরীফুর রহমানের অনুপ্রেরণা ও সঙ্গীতগুরু, জেলার আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ এমন অনেক ব্যক্তিত্ব রয়েছেন যাদের উৎসাহ অনুপ্রেরণায় আজ আমি রিয়া হতে পেরেছি, তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তাছাড়া আমি আমার মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিতে চাই সংগীত জগতের দূরপ্রান্তে।
এনটিভি অনলাইন : আমাদের দেশের সঙ্গীত ব্যবস্থা কেমন বলে আপনি মনে করো ?
কণ্ঠশিল্পী রিয়া : আসলে আমার মনে হয় আমরা নতুন যারা আছি ,আমরা শিখছিনা, আমরা সংঙ্গীত সাধনা করছিনা, তেমন ভাবে গুরুত্ব দিচ্ছিনা, যা আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে ধ্বংসের মুখে ফেলতে পারে।সম্প্রতি কিছু শিল্পীরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গান শিখছেনা, গান সম্পর্কে কোন প্রকার জ্ঞান রাখছেনা, যারা কোন কিছু না শিখেই ওস্তাদের তালিম না নিয়েই ফোনে গান শুনে শুনেই নানাভাবে গান করে যাচ্ছে এটা আমাদের সংগীত প্রেমীদের জন্য অশনি সংকেত।
এনটিভি অনলাইন : বর্তমান সংগীত জগতের এই দুরবস্থা কিভাবে যাবে বলে মনে করো ?
কণ্ঠশিল্পী রিয়া: মিউজিক ভিডিও এবং অনলাইনে ভিউওয়ার্স বাড়াতে উঠেপড়ে লেগেছে, সংগীত জগতের পরিবেশটা নষ্ট করছে; তাদের জন্য প্রকৃত মেধাবীরাও সুযোগ পাচ্ছেনা। সংগীত সাধনার বিষয়, শিখার বিষয়, জানার বিষয়, আমাদের প্রচুর পরিমানে সাধনা করতে হবে, রেওয়াজ করতে হবে; তাহলেই সমৃদ্ধি সম্ভব বলে একজন ক্ষুদ্র শিল্পী হিসেবে মনে করি।
এনটিভি অনলাইন :তোমার মূল্যবান সময়ের জন্য এনটিভি মালয়েশিয়া'র পক্ষ থেকে তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
কণ্ঠশিল্পী রিয়া: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।